দুই ফসলি জমি চাষাবাদের সব ধরনের প্রস্তুতি থাকার পরও পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার সহস্রাধিক ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক এবং বর্গাচাষি মাঠে নামতে পারছেন না। মাঠের পর মাঠ ডুবে রয়েছে কারখানার বর্জের দূষিত ও নোংরা পানিতে। কৃষি জমিতে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠছে শিল্প-কারখানা। ফলে ধান আবাদের পাশাপাশি কৃষকরা শিম, গাঁজর, ঢেঁড়স, মুলা, ফুলকপি বাঁধাকপিসহ ফসলের আবাদ নিয়েও মহা সংকটের মধ্যে পড়েছেন। এ অবস্থায় শিল্প-কারখানার সৃষ্ট বর্জ্য অপসারণ, জলাবদ্ধতা নিরসন ও কৃষি আবাদ নির্বিঘ্ন করার দাবিতে রোববার বিকেলে এক বিশাল প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও এলাকাবাসী। উপজেলার দাশুড়িয়া-মুলাডুলি মহাসড়কের সড়াইকান্দি এলাকায় ঘন্টাব্যাপী চলে এই মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ। কৃষক আমিনুল ইসলাম আমিনের সভাপতিত্বে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত মুলাডুলি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক কামাল হোসেন মিঠু। কৃষক আফজাল হোসেন খাঁন ও খায়রুজ্জামান রঞ্জনের যৌথ সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য দেন দাশুড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান বকুল সরদার, ইউপি সদস্য আব্দুল আজিজ, আলম খাঁন, আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল ইসলাম নুরু, মিজানুর রহমান, আব্দুস সামাদ, মুলাডুলি ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, সাংবাদিক গোপাল অধিকারী, কৃষক সাইদুল ইসলাম কৃষাণী জোছনা খাতুন। কর্মসূচিতে শতশত কৃষক ছাড়াও তাদের পরিবারের সদস্য ও স্কুল-কলেজে শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসীরা জানান, অপরিকল্পিত শিল্প-কলকারখান স্থাপনের ফলে মুলাডুলি ইউনিয়নের ভদ্রাবিল সংলগ্ন ১০টি গ্রামের শতশত একর ফসলি জমি বর্তমানে অনাবাদি ও পরিত্যক্ত। এসব জমি দুষিত পানিতে ডুবে রয়েছে। ভদ্রার বিলটি মুলাডুলিতে দাশুড়িয়া-নাটোর মহাসড়কের পাশে অবস্থিত। তিন বছর আগেও এই ভদ্রার বিলে বছরে দুইটি ফসলের আবাদ হতো। বর্ষাকালে স্থানীয় মৎস্যজীবীরা এই বিলে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু গত তিন বছর থেকে এখানকার ১০ গ্রামের চিত্র উল্টে। বিলের পানি নিষ্কাশনের জায়গায় ব্যক্তিমালিকানাধীন শিল্পকারখানা গড়ে উঠায় পানি নিষ্কাশিত হতে পারছেনা। ফলে বিলটি একটি বদ্ধ ও দূষিত জলাশয়ে পরিনত হয়েছে। দূষিত পানি ও কারখানার বর্জ্য বিলে প্রবেশ করায় মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি কারখানার বিষাক্ত পানির কারণে বিল সংলগ্ন পুকুরেও মাছ মারা যাচ্ছে। প্রায় সারাবছরই এখানকার সরইকান্দি, চাঁদপুর, লক্ষীকোলা, কারিগরপাড়া, রামচন্দ্রপুর, বহরপুর, দিবীপুর প্রভৃতি গ্রামের মানুষ অবর্ণনীয় কষ্টের মধ্যে বসবাস করছেন। সড়ইকান্দি গ্রামের আমজাদ হোসেন বলেন, ভদ্রাবিলের জলাশয় ভরাট করে পেপার মিল নির্মাণ করা হয়েছে। বিলের পানি নিষ্কাশনের প্রধান নালাটি ২০১৭ সালে পেপার মিল তৈরির বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে বিলের শতশত একর জমিতে স্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। যোগাযোগ করা হলে পেপার মিলের মালিক আব্দুর রশিদ জানান, নিয়ম মেনে কারখানা করা হয়েছে। তাঁর কারখানার কারণে জলাবদ্ধতা বা পানি দূষণ হচ্ছে না। কারণ তাঁর কারখানয় পানি পরিশোধনের ব্যবস্থা আছে। পানি দূষণ অন্যকোন কারণে হতে পারে।