মেধাবী স্কুল ছাত্র তৌসিফুল ইসলাম মুন্না হত্যা মামলার ২ বছর পর রহস্য উদঘাটন করলো পিবিআই
গাজীপুর মহানগর টংগী পূর্ব থানাধীন গাজীপুরা এলাকার বহুল আলোচিত ঢাকা উত্তরা শাহিন ক্যাডেট স্কুলের মেধাবী ছাত্র তৌসিফুল ইসলাম মুন্নার হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন ও আসামী গ্রেফতার করল পিবিআই গাজীপুর।
মামলা ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত আসামী ১। মোঃ আনোয়ার হোসেন (২৫), পিতা-কুদ্দুস আলী, মাতা-আনোয়ারা বেগম, সাং-চকমোকামিয়া, থানা-হালুয়াঘাট, জেলা-ময়মনসিংহ বর্তমানে নাসির শিকদারের বাড়ি, শিকদার মার্কেট, গাজীপুরা, গাজীপুর মহানগর ইং ০৭/০৬/২০২১ তারিখ রাত ০৩.৩০ ঘটিকার সময় গাজীপুর মহানগরের টঙ্গী পূর্ব থানাধীন গাজীপুরা শিকদার মার্কেট এলাকা থেকে এবং আসামী ২। মোঃ মোফাজ্জল (৩১), পিতা-উসমান আলী, মাতা-মজিরন, সাং-জাকিরপাড়া, থানা-বকশীগঞ্জ, জেলা-জামালপুর বর্তমানে গাজীপুরা সুমন মাকের্ট, মুক্তার হাজীর বাসার ভাড়াটিয়া, গাজীপুর মহানগরদ্বয় কে একই তারিখ ভোর ০৪.১০ ঘটিকার সময় গাজীপুর মহানগরের টঙ্গী পূর্ব থানাধীন গাজীপুরা সুমন মাকের্ট এলাকা থেকে অভিযান পরিচালনা করে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গত ইং ১৮/০৭/২০১৯ তারিখ সকাল ০৭.৪৫ ঘটিকার সময় ভিকটিম তৌসিফুল ইসলাম মুন্না (১৪) কে গাজীপুর মহানগরীর টংগী পূর্ব থানাধীন গাজীপুরা সুমন মার্কেট সাকিনস্থ চন্দ্রিমা হাউজ জনৈক হাবিবুর রহমান এর ৫ম তলা বাড়ীর ৪র্থ তলার ভাড়াবাসায় একা রেখে তার মা মোছাঃ হামিদা আক্তার মুকুল ছোট সন্তান তামিমকে নিয়ে স্থানীয় আবু তালেব মডেল একাডেমিতে যায় এবং এরপূর্বে সকাল অণুমান ০৭.০০ ঘটিকার সময় তৌসিফুল ইসলাম মুন্নার পিতা মিজানুর রহমান @ জাহাঙ্গীর তার কর্মস্থল বনানী ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। মুন্নার মা মোছাঃ হামিদা আক্তার মুকুল সকাল ১০.১৫ ঘটিকায় তার ছোট সন্তান তামিমসহ স্কুল থেকে ফিরে এসে বাসার প্রবেশের দরজা বাইরে থেকে আটকানো অবস্থায় পায় এবং তাদের ভাড়াকৃত ফ্ল্যাটে প্রবেশ করে তার সন্তান তৌসিফুল ইসলাম মুন্নাকে বেডরুমে খাটের উপর উপুর হয়ে রক্তাক্ত ও মৃত অবস্থায় দেখতে পেয়ে চিৎকার দেয়। পরবর্তীতে এ সংক্রান্তে ভিকটিম তৌসিফুল ইসলাম মুন্না এর পিতা মোঃ মিজানুর রহমান @ জাহাঙ্গীর, টংগী পূর্ব থানায় অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করলে টংগী পূর্ব থানার মামলার নং-৭৩ তারিখ-২৪/০৭/২০১৯ ইং ধারা-৩০২/৩৪ পেনাল কোড রুজু হয়।
মামলাটি দীর্ঘ ০২ মাস গাজীপুর মহানগরের টংগী পূর্ব থানা পুলিশ তদন্ত করে কোন রহস্য উদঘাটন করতে না পারায় পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স ঢাকা পিবিআই গাজীপুর জেলাকে তদন্তের নির্দেশ প্রদান করেন।
ডিআইজি পিবিআই জনাব বনজ কুমার মজুমদার, বিপিএম (বার), পিপিএম এর সঠিক তত্ত্বাবধান ও দিক নির্দেশনায় পিবিআই গাজীপুর ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার, জনাব মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান এর সার্বিক সহযোগিতায় মামলাটি তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক জনাব মোঃ হাফিজুর রহমান পিপিএম মামলাটি তদন্ত করেন।
আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, ঘটনার দিন ভিকটিম এর মা বাসা থেকে বের হলে বিষয়টি লক্ষ্য করে ভিকটিমের বাসায় বাবা ও মা না থাকার সুযোগে স্বর্ণ ও নগদ টাকা চুরি করার উদ্দেশ্যে প্রবেশ করলে ভিকটিম তৌসিফুল ইসলাম মুন্না আসামীদেরকে বাধা দেয় এবং ধস্তাধস্তি করে। ধস্তাধস্তি একপর্যায়ে আসামীরা ভিকটিম তৌসিফুল ইসলাম মুন্নাকে খাটের উপর ফেলে দেয় মুখ চেপে ধরে তার পেটে চাকু দিয়ে আঘাত করে নাড়ি ভুড়ি বের করে ফেলে এবং পরবর্তীতে খাটের উপর তাকে জবাই করে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে। আসামীগন উক্ত কক্ষের স্টীলের আলমারী ভেঙ্গে একটি ডিজিটাল ক্যামেরা ও মোবাইল সেট চুরি করে।
এই বিষয়ে পিবিআই গাজীপুর জেলার পুলিশ সুপার, জনাব মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান বলেন ঘটিনার দিন সকাল অনুমান ০৯.০০ ঘটিকার সময় বাসায় ভিকটিম এর বাবা ও মা না থাকার সুযোগে ভিকটিম তৌসিফুল ইসলাম মুন্নাকে ডেকে দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করে মোবাইল ও ক্যামেরা লুন্ঠন করার সময় ভিকটিম বাধা দিলে ভিকটিমকে নির্মমভাবে জবাই করে ও পেটে পোচ দিয়ে নাড়িভুড়ি বের করে। মূলত চুরি করার উদ্দেশ্যে প্রবেশ করলে আসামীদেরকে চিনে ফেলায় ভিকটিম তৌসিফুল ইসলাম মুন্নাকে হত্যা করে।
আসামী ১। মোঃ আনোয়ার হোসেন (২৫) ও আসামী ২। মোঃ মোফাজ্জল (৩১) ইং ০৭/০৬/২০২১ তারিখ বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করলে তারা নিজেদেরকে ঘটনার সাথে জড়িত অন্যান্য আসামীদের নাম উল্লেখ করে সেচ্ছায় বিজ্ঞ আদালতে ফৌঃকাঃবিঃ এর ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।
তদন্তকারী কর্মকর্তা ঃ পুলিশ পরিদর্শক জনাব মোঃ হাফিজুর রহমান পিপিএম, পিবিআ
তদন্ত তদারকি কর্মকর্তা ও পিবিআই গাজীপুর ইউনিট ইনচার্জ, পুলিশ সুপার জনাব মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান