২০০ টাকার দ্বন্দ্বের জেরে চাঞ্চল্যকর রিপন হত্যাকান্ড ; মূল হত্যাকারী গ্রেফতার।
র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে জোরালো ভূমিকা পালন করে আসছে। অবৈধ অস্ত্র, গোলাবারুদ উদ্ধার, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, খুনি, ছিনতাইকারী, অপহরণ ও প্রতারকদের গ্রেফতার করে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সদা তৎপর রয়েছে র্যাব।
গত ১২ জুলাই, ২০২৩ তারিখ সকাল অনুমান ০৮.৩০ ঘটিকার সময় পূর্ব পরিকল্পিতভাবে পাবনা জেলার আতাইকুলা থানার ভবানীপুর পূর্বপাড়া গ্রামে রাজমিস্ত্রী রিপন হোসেন’কে নৃশংসভাবে হাঁসুয়া দিয়ে কুপিয়ে মাথা, কাঁধ এবং বাম চোখে গুরুতর জখম করা হয়। ঘটনার মূল হোতা রিপনের প্রতিবেশি ভাতিজা মোঃ হৃদয়। ঘটনার পরপরই গুরুতর আহত রিপন’কে পাবনা জেনারেল হাসপাতাল এবং পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং সর্বশেষ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলেও শেষ রক্ষা হয়নি। ২৩ জুলাই, ২০২৩ তারিখ ঘটনার ১২ দিন পর মাত্র একুশ বছরের রিপন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু বরণ করেন।
মাত্র দুইশত টাকার লেনদেনকে কেন্দ্র করে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকান্ডটি সংঘটিত হয়। স্থানীয় ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আতাইকুলা থানার ভবানীপুর পূর্ব পাড়া কতিপয় ছেলে চাঁদা তুলে টিন ও বাঁশ দিয়ে একটি ক্লাব ঘর তৈরী করে। এই ক্লাব ঘর তৈরীতে নিহত রিপন ৫০০ টাকা এবং হত্যাকারী হৃদয় ২০০ টাকা দেয়।পরবর্তীতে নির্বাচন শেষ হয়ে গেলে ঘটনার অনুমান ১ মাস পূর্বে রিপনের সাথে হৃদয়ের চাচাতো ভাই আয়নালের ব্যক্তিগত দ্ব›দ্ব হয়। এই দ্ব›েদ্বর কারনে ক্লাব ঘরটি ভেঙ্গে ফেলা হয়। নিহত রিপন কøাবের ভাঙ্গা অংশ টিন, বাঁশ ইত্যাদি নিয়ে যেতে চাইলে হৃদয়, হৃদয়ের আপন ভাই তালেব এবং চাচাতো ভাই আয়নাল,মুনসুর রিপনকে হৃদয়ের ২০০ টাকা দিতে বলে। রিপন পরে টাকা দিবে বললে এ নিয়ে কথা কাটাকাটি এবং মারামারির উপক্রম হয়। হৃদয়ের মা মারামরি ঠেকাতে গেলে পড়ে গিয়ে বাম হাতে আঘাত পায়। উক্ত ঘটনার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য রিপনকে মারার উদ্দেশ্য হৃদয় স্থানীয় কামার দিয়ে একটি ধারালো হাঁসুয়া তৈরী করে এবং সুযোগ খুঁজতে থাকে।
ঘটনার দিন ১২ জুলাই, ২০২৩ খ্রিঃ তারিখ সকাল অনুমান ০৮.৩০ ঘটিকায় প্রতিদিনের ন্যায় রিপন রাজমিস্ত্রীর কাজে নিজ বাড়ি হতে একই গ্রামের জনৈক ময়নালের মুদি দোকানের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হৃদয় তার হাতে থাকা ধারালো হাঁসুয়া দিয়ে রিপনের মাথা কোপ দেয়। রিপন মাটিতে লুটিয়ে পড়লে রিপনের কাঁধ এবং বাম চোখ বরাবর একাধিক কোপ দেয়। লোকজন এগিয়ে আসলে হৃদয় তৎক্ষনাত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে রিপনের বৃদ্ধ পিতা মোঃ খোরশেদ মোল্লার অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ১২ জুলাই, ২০২৩ তারিখে পাবনা জেলার আতাইকুলা থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়, যা পরবর্তীতে হত্যা মামলায় রুপান্তরিত হয়। হত্যাকান্ডের পরপরই মূল হত্যকারী হৃদয় (২২), পিতা-মোঃ রজিম উদ্দিন দেশের বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে বেড়ায়। তুচ্ছ বিষয়ে এই নৃশংস হত্যাকান্ড এবং হত্যাকান্ডের প্রধান আসামী হৃদয় পলাতক থাকায় এলাকায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এলাকাবাসীসহ পাবনা জেলার বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ এই হত্যাকারীকে দ্রæত গ্রেফতারের মাধ্যমে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবী জানায়।
যেকোনো হত্যাকান্ডের ঘটনা সংঘটিত হওয়ার সাথে সাথেই র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত হত্যাকারীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে সক্রিয় থাকে। যার ধারাবাহিকতায় তুচ্ছ বিষয়ে এই লোমহর্ষক হত্যাকান্ডটি ঘটার পর থেকেই র্যাব-১২ এর সিপিসি-২ পাবনার সদস্যবৃন্দ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত আসামিদের গ্রেফতারের ব্যাপারে ব্যাপক গোয়েন্দা তৎপরতা শুরু করে। যার প্রেক্ষিতে হত্যাকান্ডের পর থেকেই এই মামলার প্রধান আসামী এবং হত্যাকান্ডের মূল হোতা হৃদয়কে গ্রেফতারে বিভিন্ন স্থানে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করা হয়। অবশেষে গত ১৪ আগস্ট, ২০২৩ তারিখ রাত ১১.২০ ঘটিকার সময় র্যাব-৪, সিপিসি-২ এর সহযোগীতায় আত্মগোপনকৃত হৃদয়কে ঢাকা জেলার সাভার উপজেলার আশুলিয়া থানার কাঠগড়া এলাকার একটি ক্যারামবোর্ড খেলার দোকান থেকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামীকে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে থানায় প্রেরন করা হয়।