৯/১১: এক পাল্টা চিৎকারের নাম—যে চুপ করে থাকার সময় ছিল না
লেখক জাহেদুল ইসলাম আল রাইয়ান
বিশ্বজুড়ে মুসলিম জাতির রক্ত ঝরছিল। ফিলিস্তিন, ইরাক, আফগানিস্তান, বসনিয়া, চেচনিয়া—সবখানেই মৃত মুসলমান, অথচ নীরব বিশ্ব। আর মুসলিম বিশ্ব? ক্ষমতার দালালি আর আমেরিকার পা চাটার চূড়ান্ত প্রতিযোগিতা। এই পরিস্থিতিতে এক দল মানুষ বলেছিল, “চুপ করে থাকব না”—তাদের নাম আল-কায়েদা।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর, নিউইয়র্কের আকাশে আগুন জ্বলে উঠেছিল। সে আগুন ছিল শুধুই প্রতিশোধের নয়, বরং জাহিলি বিশ্বের চোখে চোখ রাখার সাহসিকতা। আমেরিকার বহু বছর ধরে চলা মুসলিম ভূমিতে আগ্রাসনের প্রতিক্রিয়া হিসেবেই এই হামলা আসে। কেউ কি ভুলে গেছেন? ১৯৯১ সালে আমেরিকা ইরাকে ৫ লাখ শিশু হত্যা করে যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, যার বিষাক্ত ফলাফল আজও টিকে আছে?
যারা ৯/১১-কে ‘সন্ত্রাস’ বলেন, তারা ইতিহাসকে খণ্ডিতভাবে পড়েন। ইসলাম কেবল নামাজ আর রোজার ধর্ম নয়, এটা একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা, যেখানে অত্যাচারীর বিরুদ্ধে দাঁড়ানো ফরজ। কুরআন ঘোষণা করে:
“যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হয়েছে, তাদেরকে যুদ্ধের অনুমতি দেয়া হয়েছে, কারণ তাদের উপর জুলুম করা হয়েছে…” (সূরা হজ: ৩৯)
এই আয়াত আজও আফগানিস্তানের, ইরাকের, ফিলিস্তিনের মুসলমানদের জন্য জারি আছে।
শায়খ উসামা বিন লাদেনের বিরুদ্ধে বলা হয়, তিনি খারেজি, বিদ্রোহী, শরিয়া-বিরোধী। অথচ তিনি ছিলেন সেই ব্যক্তি, যিনি মুসলিম জাতির আত্মমর্যাদা ফিরিয়ে দিতে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। মদীনার মাটিতে বসে যারা মার্কিন ঘাঁটিতে গোলাপ ছুঁড়ে, তারা যদি ইসলামি ‘সতর্কতা’র মুখোশ পরে আল-কায়েদার বিরুদ্ধে ফতোয়া দেয়, তাহলে ইতিহাস তাদেরকে ক্ষমা করবে না।
আল-কায়েদার জিহাদ ছিল নিরীহ মানুষ হত্যা নয়—বরং আগ্রাসন চালানো পরাশক্তিকে তাদের মাটিতে আঘাত হানা। নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন এসব ছিল যুদ্ধের সিদ্ধান্ত কেন্দ্র—সামরিক আগ্রাসনের মূল ঘাঁটি। ইসলামের ইতিহাসে কাফেরের শক্তিকেন্দ্র লক্ষ্য করা নতুন কিছু নয়। রাসূল ﷺ-ও বদর যুদ্ধে কুরাইশের নেতৃস্থানীয়দের প্রথম টার্গেট করেছিলেন।
আর ‘ইসলামের ভাবমূর্তি’? তা কাদের চোখে? যাদের চোখে হিজাব নিষিদ্ধ, আজান শব্দদূষণ? ইসলামের সত্য পথে কেউ থাকলে পশ্চিমাদের দৃষ্টিতে সে চরমপন্থী হবেই। সত্য কখনো জনপ্রিয় হতে পারে না।
৯/১১ আমাদের শেখায়: মুসলমান যদি নিজের সম্মান বাঁচাতে, ভূমি রক্ষায়, রক্তের প্রতিশোধে দাঁড়াতে না পারে—তবে সে কেবল নামধারী। আল-কায়েদা ছিল সে সাহসের নাম, যার মুখপাত্র বলেছিল:
“তোমরা আমাদের দেশ ধ্বংস করলে, আমরা তোমাদের ঘুম ভাঙাব।”
যদি ৯/১১ না ঘটতো, পশ্চিমা আগ্রাসনের মুখে মুসলমানদের জাগরণ কখন হতো? আজ যারা জিহাদ শব্দ শুনলেই কাঁপে, তাদের মনে রাখা উচিত—একটা জাতি অস্তিত্বের জন্য লড়লে, ইতিহাস তাকে সন্ত্রাসী নয়, ‘মুক্তিযোদ্ধা’ নামে চেনে। আমেরিকার ভাষায় আল-কায়েদা সন্ত্রাসী, কিন্তু যারা কুরআনের ভাষায় চিন্তা করে, তাদের কাছে তারা মুজাহিদ।