সাজিদের রহস্যজনক মৃত্যু, বিক্ষোভে উত্তাল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
মনিরুজ্জামান তুহিন, ইবি প্রতিনিধি:
আল কুরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহ’র রহস্যজনক মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে দিনব্যাপী প্রশাসন ভবন অবরোধ করেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীরা।
শনিবার (১৯ জুলাই) সকাল এগারোটা নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনে পূর্বঘোষিত এ কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থীরা। প্রশাসনের ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করে সাজিদের মৃত্যুকে রহস্যজনক আখ্যা দিয়ে এর পেছনে প্রশাসনের দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনা ও দায়িত্বে গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন তারা।কর্মসূচির অংশ হিসেবে ফুটবল মাঠে সাজিদের গায়েবানা জানাজা আদায় করেছে শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন,”লাশ দেখে প্রশাসনকে জানানোর প্রায় পৌনে এক ঘন্টা পর সেই লাশ উদ্ধার করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে থানা হওয়া সত্ত্বেও পুলিশ আসতে এতো সময় লাগলো কেন? এছাড়া লাশ উঠানোর প্রায় আধা ঘন্টা পার হলেও কোন ডাক্তার বা অ্যাম্বুলেন্স আসেনি। পরে আমরা বাধ্য হয়ে ভ্যানে করে তাকে মেডিকেলে নিয়ে যাই। পরে তাকে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।”
তারা আরোও অভিযোগ করে বলেন, “লাশ শনাক্তের দুই ঘন্টার মধ্যেও প্রক্টর, ছাত্র উপদেষ্টা কিংবা হল প্রভোস্টের দেখা মেলেনি। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ জায়গা গুলোতে কোন সিসিটিভি ক্যামেরা সচল নেই। এখন আমরা দেখতেও পাচ্ছি না, সে কখন কোথায় গিয়েছে। একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন নিরাপত্তার ঘাটতি মোটেও কাম্য নয়। বাজেট ঘাটতির কথা বলে প্রশাসন সিসিটিভি ক্যামেরা লাগাচ্ছে না। তাদের যদি এতই ঘাটতি থাকে তাহলে আমাদের বলুক আমরা নিজেরা চাঁদা তুলে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগাবো।”
এসময় শিক্ষার্থীরা সাজিদের মৃত্যুর তদন্ত দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন করে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট প্রকাশ করা, পুরো ক্যাম্পাস সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনা, আবাসিক হলে শিক্ষার্থীদের এন্ট্রি ও এক্সিট শতভাগ মনিটরিংয়ের আওতায় নিয়ে আসা, ক্যাম্পাসের চারপাশে পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তাবেষ্টিত বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ করা, ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত স্ট্রিট লাইট স্থাপন ও সক্রিয় রাখা ও বহিরাগত প্রবেশ নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন। দাবি বাস্তবায়ন না হলে কঠোর কর্মসূচির হুশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
এদিকে সাজিদের মৃত্যুর ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটন না করা পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনেরও ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
এসময় বৈছাআ ইবি শাখা, শাখা ছাত্রদল, ছাত্রশিবিরসহ ক্রিয়াশীল সকল সামাজিক ও রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠন শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে একাত্মতা পোষণ করেন এবং তাদের সাথে সহাবস্থান করেন।
উল্লেখ্য, গত ১৭ জুলাই (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যা ছয়টার দিকে শাহ আজিজুর রহমান হল সংলগ্ন পুকুরে সাজিদ আব্দুল্লাহর মরদেহ ভেসে থাকতে দেখে শিক্ষার্থীরা। পরে বিকেল সাড়ে ৬ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও ইবি থানা পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতিতে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। কীভাবে তার মৃত্যু হলো? আদৌও তার সঙ্গে কোনো ঘটনা ঘটেছিল কিনা? এসব প্রশ্ন ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের দাবি জানিয়েছেন। ইতোমধ্যে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শহীদ জিয়াউর রহমান হল কর্তৃপক্ষ আলাদা আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।