শেখ কামালের জন্মদিন পালন
আজ বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামালে ৭২
তম জন্মদিন। দিনটি উপলক্ষে সারা দেশের মতো ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদে শেখ কামালের জীবনীর উপর সংক্ষিপ্ত আলোচনা ও তার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পন করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পাবনা -৪ আসনে এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান বিশ্বাস, ঈশ্বরদী পৌর মেয়র ইছাহক আলী মালিথা, ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পিএম ইমরুল কায়েস, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম খাঁন, আতিয়া ফেরদৌস কাকলী, ওসি আসাদুজ্জামানসহ উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তাবৃন্দ। আলোচনা সভায় এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান বিশ্বাস বলেন, শেখ কামাল রাষ্ট্রপতির সন্তান হলেও তাঁর মধ্যে ছিল না অহংকার, ছিল না বিলাসিতা। তাই বন্ধু, সতীর্থ ও সহপাঠীদের চোখে বঙ্গবন্ধুতনয় শেখ কামাল হয়ে উঠেছিলেন স্বপ্নবান ও আদর্শ তারুণ্যের এক উজ্জ্বল প্রতিকৃতি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামাল। ১৯৪৯ সালের আগস্টের এই দিনে তাঁর জন্ম।
বেঁচে থাকলে তাঁর বয়স হতো ৭২ বছর। উত্তরাধিকার সূত্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নানা মানবিক ও নেতৃত্ব গুণাবলী পেয়েছিলেন শেখ কামাল। এর সঙ্গে শাণিত হয়েছিল সংস্কৃতিবোধ ও ক্রীড়া দর্শন। সংযুক্ত হয়েছিল দেশ ও মানুষের প্রতি অনুপম দরদ এবং দায়িত্ববোধ। খেলার মাঠ থেকে নাটকের মঞ্চ, সংগীতের ভুবন থেকে রাজনীতির ময়দান সর্বত্র ছিল তাঁর উজ্জ্বল উপস্থিতি। ছিলেন বন্ধু ও সতীর্থদের মধ্যমণি।শেখ কামাল একাধারে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, রাজনীতিবিদ, ক্রীড়া সংগঠক, সাংস্কৃতিক সংগঠক ও সমাজ চিন্তক। তাঁর স্ত্রী সুলতানা কামালও বিশিষ্ট ক্রীড়াবিদ ছিলেন।
বিবাহিত জীবনে প্রবেশের এক মাসের মাথায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট গোটা পরিবারের সঙ্গে তাঁকেও শাহাদাতবরণ করতে হয় বাংলাদেশবিরোধী নর্দমার কীটদের হাতে। মানুষ হিসেবে শেখ কামাল ছিলেন অলরাউন্ডার। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে, কিংবা রাজনীতির মাঠে তাঁর প্রয়োজনীয়তা যখন অনিবার্য, ঠিক তখনই রাজনীতির মাঠ। যুদ্ধের ময়দানে বলিষ্ঠ নেতৃত্বদানের পাশাপাশি তাঁকে পাওয়া গেছে খেলার মাঠে, গানের আসরে, নাটকের মঞ্চে, সেতারের সুরে, বন্ধুদের আড্ডায় ও ছাত্ররাজনীতির স্লোগানে।১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালোরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী জাতির পিতাকে আটক করে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়ার পর মা-মাটি-মাতৃভূমির সম্ভ্রম রক্ষায় মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন শেখ কামাল।
মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক আতাউল গনি ওসমানীর এডিসি হিসেবে দেশকে স্বাধীন করতে তিনি রাখেন বীরত্বব্যঞ্জক ভূমিকা। একজন ছাত্র সংগঠক হিসেবে তিনি কখনও নেতৃত্বের শীর্ষে আসতে চাননি। তিনিই ছাত্রলীগকে সংগঠিত করতেন, প্রেরণা জোগাতেন। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী ছাত্র রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন তিনি। ছিলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা, পরবর্তীতে জাতীয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা।
মহান মুক্তিযুদ্ধের পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন দেশ গঠনের কাজে নিজেকে সমর্পণ করেছেন, তখন পিতার কাজে সহায়তা করার পাশাপাশি বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের উন্নয়নে কাজ শুরু করেছেন তিনি। তাঁর হাতের ছোঁয়ায় নিমেষেই বদলে গিয়েছিল বাংলাদেশের ফুটবল, ক্রিকেট, হকিসহ বিভিন্ন খেলাধুলা। আবাহনী ক্রীড়া চক্রের মত একটি ক্রীড়া প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তাঁর হাতেই। ঢাকার শাহীন স্কুলে অধ্যয়নকালে শেখ কামাল ছিলেন স্কুলের প্রতিটা খেলার পরিচিত মুখ। নিখুঁত লাইন-লেন্থের একজন ফাস্ট বোলার হিসেবেও তাঁর সুনাম ছিল। তিনি আজাদ বয়েজ ক্লাবের হয়ে প্রথম বিভাগ ক্রিকেট খেলেছেন দীর্ঘদিন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হওয়ার পর তিনি ছিলেন সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের বাস্কেটবল টিমের অধিনায়ক। শুধু খেলাধুলা নয়- সংগীত, বিতর্ক, অভিনয়, উপস্থিত বক্তৃতা থেকে শুরু করে কোথায় ছিলেন না শেখ কামাল।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অন্যান্য সদস্যদের সাথে শেখ কামালেও নির্মম ভাবে হত্যা করে বিপথগামী সেনারা।