শিশু আত্মহত্যার চেষ্টা।
পাবনার ঈশ্বরদীতে ১১ বছরের এক শিশুকে আত্মহত্যার চেষ্টার সময় ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করেছে এলাকাবাসী।
বৃহস্পতিবার ঈশ্বরদী পৌর এলাকার নিউকলোনি রওজাতুল কোরআন রহমানিয়া মাদ্রাসায় এ ঘটনা ঘটে।
ঘটনার পরপরই মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি করে ওই শিশুটিকে তার দেশের বাড়ি পাঠিয়ে দেয়।
মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষকের দাবি—শিশুটি বলেছে, ‘স্বপ্নে মৃত মায়ের ডাকে সাড়া দিতে সে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে।’
আত্মহত্যার চেষ্টা করা ওই শিশু মাদ্রাসাটিতে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল প্রায় সাত মাস আগে। মাসিক ২ হাজার টাকা খরচের বিনিময়ে মাদ্রাসার আবাসিক শাখায় লেখাপড়া করছে সে। ওই শিক্ষার্থী বর্তমানে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র।
উদ্ধারের পর শিশুটির দেওয়া ভাষ্যের বরাত দিয়ে স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার ভোর রাতে সাহরি খাওয়ার পর ঘুমিয়ে পড়েছিল ওই শিক্ষার্থী। কিন্তু সকাল আনুমানিক সাড়ে ৭টার দিকে তার ঘুম ভেঙে গেলে সে তার বিছানাপত্র বাঁধার দড়ি দোতলায় স্টিলের রেলিংয়ের সঙ্গে বেঁধে গলায় ফাঁস নেওয়ার চেষ্টা করে। পরের ঘটনাগুলো আল আমিন জানাতে পারছিল না।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরো জানান, বৃহস্পতিবার সকালে মাদ্রাসার পার্শ্ববর্তী এলাকার এক ব্যক্তি তার কর্মস্থল রূপপুরে যাচ্ছিলেন। তিনি ওই শিশুকে মাদ্রাসার রেলিংয়ের সংগে দড়িতে ফাস লাগানো অবস্থায় ঝুলে ছটফট করতে দেখে চিৎকার দিয়ে উঠেন। চিৎকার শুনে পাশের এক নারী দোকানদারসহ নিকটবর্তী তিন-চারজন ছুটে এসে মাদ্রাসার সীমানা প্রাচীরের উপর দাঁড়িয়ে ঝুলন্ত শিশুটিকে দড়ি কেটে উদ্ধার করেন।
প্রত্যক্ষদশীরা আরও জানান, মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারী ও অন্য শিক্ষার্থীদের সবাই তখন ঘুমিয়ে ছিল।
উদ্ধারের পর অসুস্থ শিশুটির মাথায় পানি দেওয়ার সময় উপস্থিত সবার চিৎকারে ঘুম ভাঙে মাদ্রাসার শিক্ষকদের। তাঁরা তখন সেখানে আসেন। এ সময় মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে যাওয়া শিশুটি ভয়ে কোনো কথা বলতে পারছিল না। শুধু ভয়ে কাতর চোখে সে শিক্ষকদের দিকে তাকাচ্ছিল। ঘটনার পর স্থানীয় লোকজন জড়ো হয় এবং শিক্ষার্থীটির আত্মহত্যার চেষ্টা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এদিকে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ধামাচাপা দিতে ওই শিক্ষার্থীর বাবাকে নাটোর থেকে মোবাইলে ডেকে আনেন। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশসহ কাউকেই জানানো হয়নি।
এমনকি ছাত্রটিকে কোনো প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়নি বলেও জানায় এলাকাবাসী। পরে ওই শিক্ষার্থীর বাবাকে ডেকে এনে তাঁর হাতে আল আমিনকে তুলে দেওয়া হয়।
মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মাওলানা গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘আমরা মাদ্রাসায় কোনো শিক্ষার্থীকে অত্যাচার করি না। অথচ কেউ কেউ এসব বলার চেষ্টা করছে যে, আমাদের অত্যাচারে ওই শিক্ষার্থী আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে।’
গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘ওই শিক্ষার্থী সুস্থ হওয়ার পর তার আত্মহত্যার কারণ জানতে চাওয়ায় সে বলেছে, ‘‘আমি আমার মৃত মাকে স্বপ্নে দেখেছি। মা আমাকে তার কাছে ডাকছে। তাই আমি আত্মহত্যা করতে চেয়েছি।”
তিনি আরও বলেন, তার বাবা গত তিন মাস মাদ্রাসায় কোনো খবর নেয় না। সেটার কারণেও সে এমনটা করতে পারে।’
শিশুটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া, পুলিশ জানানো হয়নি কেন, সে বিষয়ে জানতে চাইলে গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘আসলেই জানানো উচিত ছিল। আমার ভুল হয়ে গেছে।’
ছেলের সঙ্গে টানা তিন মাস যোগাযোগ না করার কারণ সম্পর্কে শিক্ষার্থীর বাবা বলেন, ‘আমি নর্থবেঙ্গল সুগার মিলে চাকরি করি। জমিতে চৈতালি থাকার কারণে মাসখানেক আমি ছেলেকে দেখতে যেতে পারিনি। কিন্তু আমি প্রতিদিনই সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১০টা নাগাদ হুজুরের মোবাইলে ফোন করি। কিন্তু হুজুর ইদানীং আমার ফোন ধরেন না। তাই ছেলের সঙ্গে কথা হয়নি কয়েক দিন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি যেতে না পারলেও ভাতিজাকে দিয়ে আমার ছেলেকে মাসিক খরচের টাকা পাঠানোসহ তার মাধ্যমে বাড়িতেও নিয়ে গেছি বেড়িয়ে আসার জন্য। সুতরাং আমি যোগাযোগ রাখি না এমন অভিযোগ মিথ্যা।’
ঈশ্বরদী থানার ওসি আসাদুজ্জামান বলেন, ‘ঘটনাটি জানার পরপরই খোঁজখবর নিয়েছি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করেছি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তো বিষয়টি সমাজসেবা কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের নিয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে পারেন। পুলিশের পক্ষ থেকে বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি।’
ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার পিএম ইমরুল কায়েসের সংগে যোগাযোগ করা হলে বলেন, ‘ওসি আমাকে কিছুই জানায়নি। আমি নিজেও ঘটনাটি জানিনা।