তাঁত ব্যবসায়ী ইলিয়াস হোসেন এর চাঞ্চল্যকর ও লোমহর্ষক হত্যাকান্ডের ঘটনার মূল হোতা বাবলু ব্যাপারী গ্রেফতার।
র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে জোরালো ভূমিকা পালন করে আসছে। অবৈধ অস্ত্র, গোলাবারুদ উদ্ধার, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, খুনি, ছিনতাইকারী, অপহরণ ও প্রতারকদের গ্রেফতার করে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সদা তৎপর রয়েছে র্যাব।
গত ৩১ জুলাই ২০২৩ তারিখে পাবনা সদরের গয়েশপুর ইউনিয়নের ধোপাঘাটা গ্রামের একটি প্রত্যন্ত এলাকায় ক্ষেতের পাশে জালালপুরের তাঁত ব্যবসায়ী ইলিয়াস হোসেনের ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ পাওয়া যায়। মৃতদেহটি উদ্ধারের পর জানা যায়, ইলিয়াস হোসেনকে মৃত্যুর পূর্বে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়েছিল। ইলিয়াসের মাথায় ও ঘাড়ে ধারালো অস্ত্রের সাহায্যে কুপিয়ে তার শরীরকে ক্ষত বিক্ষত করে এবং তার দুই পা হাটু থেকে বিচ্ছিন্ন করার মাধ্যমে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয় যা মধ্যযুগীয় বর্বরতার সব সীমাকেও অতিক্রম করে। পরবর্তীতে এজাহার সূত্রমতে জানা যায়, গত ০৯ জুলাই, ২০২৩ তারিখ পাবনা সদরের জালালপুর বাজারে একটি জিন্স প্যান্ট ক্রয় বিক্রয় করার মত তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কথা কাটাকাটি এবং হাতাহাতির জেরে এই নৃশংস হত্যাকান্ডটি ঘটানো হয়েছে।
উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে গত ০১ আগস্ট, ২০২৩ তারিখে পাবনা সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। এছাড়াও হত্যাকান্ডের পর থেকেই এই লোমহর্ষক ঘটনাটি ঐ এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। এলাকাবাসী হত্যাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ, মানববন্ধন ও ঢাকা-পাবনা মহাসড়ক অবরোধ কর্মসূচী পালন করে। পরবর্তীতে প্রশাসনের আশ্বাসে এলাকাবাসী অবরোধ তুলে নিলে, এই হত্যাকান্ডটির বিচারের দাবিতে বিভিন্ন এলাকায় পোস্টার ও লিফলেট বিতরণ করা হয়। এলাকাবাসীসহ সকলেই এই হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে জোর দাবি জানিয়ে যাচ্ছিল। যার ফলশ্রুতিতে উক্ত ঘটনাটি সারাদেশে বিভিন্ন জাতীয় প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে প্রচারিত হয়।
যেকোনো হত্যাকান্ডের ঘটনা সংঘটিত হওয়ার সাথে সাথেই র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত কুখ্যাত হত্যাকারীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে সক্রিয় থাকে। যার ধারাবাহিকতায় এই লোমহর্ষক হত্যাকান্ডটি ঘটার পর থেকেই র্যাব-১২ এর সিপিসি-২ পাবনার সদস্যবৃন্দ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত আসামিদের গ্রেফতারের ব্যাপারে ব্যাপক গোয়েন্দা তৎপরতা শুরু করে। যার প্রেক্ষিতে হত্যাকান্ডের পর থেকেই এই মামলার প্রধান আসামী এবং হত্যাকান্ডের মূল হোতা বাবলু ব্যাপারীকে গ্রেফতারে বিভিন্ন স্থানে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করা হয়। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে ধূর্ত বাবলু একাধিকবার অবস্থান পরিবর্তন করলেও সে বেশি দিন পলাতক থাকতে পারেনি। অবশেষে গত ০৯ আগস্ট, ২০২৩ তারিখ বিকেল ৪ ঘটিকার সময় আত্মগোপনকৃত বাবলু ব্যাপারীকে সাঁথিয়া উপজেলার আতাইকুলা থানাধীন চৌবাড়িয়া গ্রামের একটি প্রত্যন্ত এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামী বাবলু ব্যাপারীর বিরুদ্ধে ২০১৮ সালে পাবনা জেলার আতাইকুলা থানায় ০১টি হত্যা মামলা সহ (মামলা নং-৯/৮৬, তারিখঃ ২৫ জুন, ২০১৮ ধারাঃ ১৪৩/১৪৭/১৪৮/৩২৫/৩২৬/৩০২/১১৪/৩৪/১০৯ পেনাল কোড-১৮৬০) ২০১৩ সালে পাবনা সদর থানায় ০১টি ঘর ভাংচুর ও চুরির মামলা রয়েছে (মামলা নং-০৯, তারিখঃ ০৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩; ধারাঃ ১৪৩/৪৪৮/৪২৭/৩৮০ পেনাল কোড-১৮৬০)।
গ্রেফতারকৃত আসামীকে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে তদন্তকারী সংস্থার নিকট হস্তান্তর করা হবে।